বিশ্বাস ও পুনর্মিলন

২১শে ফেব্রুয়ারী (ফেব্রুয়ারী ২০১২)

জাকিয়া জেসমিন যূথী
  • ২১
  • ৪৩
১//
“মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি;
মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি;
মোরা একটি মুখের হাসির জন্য অস্ত্র ধরি...”

বছর ঘুরে এক একটি দিবস আসে আর সবাই বিশেষ বিশেষ গানগুলো শুনে। কেন? সেগুলো কি অন্য সব ধরনের গানের সাথে মাঝে মাঝে শুনা যায় না? গানগুলো তো শুধু গান নয়! এক একটি জীবন!

গানটি শুনতে শুনতে শামসুন নাহারের চোখ ভিজে আসে! সঠিক ওজনে কাঁদতে না পেরে চাপা শক্ত হয়ে আসে। চোখ ও মুখের কোণে ভাঁজ সৃষ্টি হয়।

এই ভাষা, এই দেশ অর্জন করতে কত জনকে কতকিছু হারাতে হলো! কত মায়ের বুক খালি হয়েছে। কত বউ হারিয়েছে তার প্রাণপ্রিয় স্বামীকে। কত প্রেমিকা তার প্রেমিককে। আর শামসুন নাহার? তিনিও হারিয়েছেন তার আদরের ছোট ভাইটিকে। জানেন না আদৌ তার আর ভাইটির সাথে আর-একবার দেখা হয়ে উঠবে কিনা। সময় তো ক্রমশঃ এগিয়ে এসেছে!

২//
সোনিয়া এক মনে তার ঘরে ছবি আঁকছে। অয়েল পেইন্টিং! সারা ঘর ময় ছড়িয়ে রয়েছে সাত-আটটি চকচকে ছবির ক্যানভাস। ছোট বড়। কিছু এঁকে রেখেছে জল রঙেও। এগুলো নতুন করেছে মনে হচ্ছে।

২১শে ফেব্রুয়ারী চারুকলার জয়নাল গ্যালারীতে ওদের চার বন্ধুর যৌথ চিত্র প্রদর্শনী। এবার নিয়ে অষ্টম বারের মতন প্রদর্শনী করছে। ভালই আঁকে মেয়েটা।

প্রতিটি বিশেষ বিশেষ দিবসের আগে আগে কত ছবি যে আঁকে! নিজের কাজে মগ্ন হয়ে থাকা নাতনীকে পেছন থেকে নিরবে দেখতে থাকেন শামসুন নাহার।

এক মনে ছবি আঁকতে আঁকতে পেছন ফিরে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে থাকা নানীকে দেখে বলে উঠলো,

“ওহ নানী, আপনি আবারো এই রঙের ঘরে ঢুকেছেন? বলেছি না এসবে আপনার সমস্যা হতে পারে!”
“আ---র সমস্যা! বাঁচবোই আর কয় দি--ন!”
“ধ্যাত! এই নানীটা না-আআ...! কিচ্ছু বলা যায় না!” রাগ করে বলে উঠে যায় ও।

শামসুন নাহার এগিয়ে এসে ঘরের ভেতরে একটা চেয়ারে আস্তে আস্তে বসতে চেষ্টা করেন। ইদানিং তার শরীর অনেক ভারী হয়েছে। ইচ্ছে মতন আরামে আগের মতন আর শরীরটাকে মুভ করতে পারেন না। সোনিয়া কাছে এসে নানীকে ঠিকমত বসতে সাহায্য করলো। কিছুক্ষণ নানীর হাঁটুতে মাথা রেখে মেঝেতে বসলো। কিছুটা সময় দু’জনেই চুপ। কোন কথা নেই। “কি এত ভাবছে মেয়েটা!” নাতনীর মাথায় হাত রাখেন নানী। সোনিয়া মুখ তুলে যে ছবিটা এতক্ষণ মনযোগ দিয়ে এঁকে চলেছিলো, তার দিকে তাকালো। আবারো কিছু ভাবলো। ঠোঁটের মধ্য থেকে অয়েল-ব্রাশ এর গোঁড়া বের করে ঘাড়ের কাছে বার কয়েক নাচালো। তারপরে নানীর দিকে চেয়ে ছবিটির দিকে ইশারা দিয়ে আবার বলে উঠলো,

“আচ্ছা, নানী, বলেন তো এই ছবিটা ক্যামন আঁকলাম?”
“হুঁ-উউউ! ভা-লো-ই!” নানী বলে উঠেন থেমে থেমে।
“কিন্তু আমার মনে হচ্ছে, কি যেন একটা নেই! কি দিলে যেন আরো বেশি পারফেক্ট হতো!” বিরবির করে বলতে বলতে আবার এগিয়ে যায় নিজের পেইন্টিং এর দিকে।

শামসুন নাহার বসে থাকেন একা। আর ভাবতে থাকেন! মনে মনে বলতে থাকেন, “আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে তো তোরা সামনে থেকে দেখিসনি, অনুভব করতে পারিস না তাই কি ছিলো সেটা! যা নিজ চোখে দেখিস নাই, অনুভব করতে পারিস নাই তা কি করে ফুঁটিয়ে তুলবি! যত ভালোই আঁকিস কিছুটা ফাঁক তো রয়েই যাবে!”

আবারো মনে পরে যায় ছোট ভাইটার কথা। চোখের কোণে জল চিক চিক করে উঠতে থাকে তাঁর।

৩//
শামসুন নাহার দিনের বেশির ভাগ সময় বড় মেয়ের সাথেই থাকেন। পাঁচ মেয়ে ও দুই ছেলের বেড়ে ওঠার সাথে সাথে রিটায়ারমেন্টের টাকা দিয়ে তাঁর স্বামী আলহাজ্জ্ব হাফিজুদ্দিন এই বাড়িটা বানিয়েছিলেন। আজ তাই সব ছেলেমেয়ে নাতিনাতনী সাথে নিয়ে তাঁর চাঁদের হাট। সকাল সন্ধ্যা ছেলেমেয়ে নাতি নাতনীরা সবাইই খোঁজখবর রাখেন।

হাফিজুদ্দিন সাহেব থাকেন নিজের ধর্মকর্ম নিয়ে। নামাজ পড়া, খাওয়া আর ঘুমানো ছাড়া এখন আর অন্য কোন কাজ নেই। যথেষ্ট বয়স হয়ে গেছে। নব্বই পেরিয়েছেন কয়েক বছর হলো। কথাবার্তা খুব কমই মনে থাকে ওনার। নিজের ঐ তিন কর্মের বাইরে বিশেষ কারো সাথে কথাটথাও বলেন না। কথা বললেও ঠিক ঠাওর করতে পারেন না যে কার সাথে কথা বলছেন। তাই শামসুন নাহার একা ঘরে কি করবেন। তাঁর চেয়ে পাশের ফ্লাটে বড় মেয়ের ঘরে সময় কাটাতেই ভালোবাসেন।

বড় মেয়েটা ক’দিন ধরে খুব ব্যস্ত। খুব ছুঁটাছুটি করছে। পাসপোর্ট বানানোর জন্য। বিদেশে যাবে। আমেরিকা। তাঁর বড় ছেলের কাছে। ছেলের পিএইচডি শেষ হবে সামনে। তারই রিসিপশনে প্রত্যেক ছেলে-মেয়ে তাঁদের বাবা-মাকে নেবার জন্য ইনভাইটেশন লেটার পাঠিয়ে দেবে। বাবু সেটা পাঠাবেনা। সাথে করেই নিয়ে আসবে। আসছে সপ্তাহেই সে ছুটিতে দেশে আসছে। থাকবে মাস দেড়েক।

শুনছেন নাতির নাকি এবার বিয়েও করে বউ সাথে নিয়ে যাবার ইচ্ছা। অনেক পাত্রী দেখা হচ্ছে। অল্প সময়ের মধ্যে ভালো পাত্রী খুঁজে পাওয়া চাট্টিখানি কথা নয়! তাঁর উপর নাতির খুব ডিমান্ড! নিজের মতন জোড়া খুঁজছে সে। বুয়েট, ঢাকা ভার্সিটির মেয়ে চাই! নাতির মতন যেন সুইট হয়! ফর্সা! ইত্যাদি ইত্যাদি। নাতির কোন মেয়েই মনে ধরছিলো না। অনেক মেয়েই দেখানো হয়েছে। এখনো দেখানো হচ্ছে। সবার সাথে এক কথা, “দেশের বাইরে গিয়ে থাকতে রাজী আছে কিনা!” অনেকে রাজী হয়নি বলে পছন্দ হলেও বাইরে যাবেনা বিধায় ক্যানসেল করতে হচ্ছে।

ছেলে মাইক্রোসফট কম্পানীতে ভালো চাকরি পেয়েছে। সুতরাং অত ভালো চাকরি ছেড়ে সে এই দেশে ফিরে আসবেনা। ভালো বেতন!

“সবাই বিদেশ চলে যেতে চায়!” দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন শামসুন নাহার। “এই দেশটাকে নিজের বলে পাওয়ার জন্য এক সময় কত মানুষ স্বজন হারা হয়েছে। কত ত্যাগের বিনিময়ে পাওয়া এই দেশটা! লোকজন এখন সব বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে!” নিজের মেয়েই ছেলের সাথে বাইরে স্যাটেল হতে চাইছে। তাঁর ভাষায় “এই হরতাল, যানজট, দূর্নীতির দেশে এখন আর টিকে থাকার উপায় নেই! তাঁর চেয়ে করাপশনমুক্ত বিদেশে চলে যাওয়া অনেক ভালো। অন্তত জানে বেঁচে থাকা যাবে!”

কথাটা একেবারে মিথ্যে বলেনি মেয়েটা। এত কষ্টে পাওয়া দেশটা এভাবে পালটে যাবে কে ভেবেছিলো!

৪//
ছোট নাতনী নাদিবা নূর খুব ব্যস্ত! মেপল লিফ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে চাকরী করে। বাসায় ফিরেই সামান্য কিছু মুখে দিয়েই আবার বসে যায় টিউশনীতে। আজ এখনো ফেরেনি। সন্ধ্যার আযান হয়ে গেছে।

নাদিবা ফেরেনি। কিন্তু ওর কাছে যে পিচ্চি মেয়েটা পড়তে আসে সে এসে পরেছে। সাথে কাজের মেয়েটা।
শামসুন নাহার মাঝে মাঝে এদের দেখেন। কখনো কথা বলা হয়নি। আজ যখন নাতনী ফেরেনি কথা বলা যাক। সময় কাটবে।

“কি নাম তোমার?”
“ওর নাম এশা।” উত্তর দিলো কাজের মেয়েটা।
“তুমি নাম বলতে পারো না?”
“আপু, তোমার নাম বলো!” এবারো উত্তর দিলো কাজের মেয়েটাই।
“মা’ নেম ইস এশা!” এতক্ষণে কথা বলে উঠলো বাচ্চাটা। কি বললো? নামই বললো নাকি! ইংরেজীতে বলেছে?

কি যে শেখাচ্ছে আজকালকার মা-গুলো বাচ্চাদের! বাংলা স্কুলে দিলে কি সমস্যা!

“ওহ এশা! উ’হ্যাভ খাম?” নাদিবা ঢুকেছে মাত্র।
“ইয়েস মিস!” খলোখলো হাসিতে চঞ্চল হয়ে দাঁড়ালো এশা।

শামসুন নাহার উঠে চলে এলেন মেয়ের ঘরে। মেয়ে জামাই নেই। এ ঘরে টিভি আছে। নামাজ কালাম শেষে মাঝেমাঝে মেয়ের সাথে বসে বাংলা নাটকগুলো উপভোগ করেন। আজ একুশে ফেব্রুয়ারী উপলক্ষ্যে নাটক দেখাচ্ছে সব বাংলা চ্যানেলগুলো।

খুব মনযোগে নাটক দেখতে বসেন শামসুন নাহার। কিছুক্ষণের মধ্যেই স্মৃতিতে আবার ভেসে আসে খোকনের কথা। সেই সব দিনগুলো। চোখের ডাক্তার হয়ে ইন্টার্নি করছিলো ভাইটা। ঢাকা মেডিকে্লের হল থেকে সেই যে ধরে নিয়ে গেছিলো ভাইটাকে আর জানা হলোনা আদৌ সে বেঁচে ফিরতে পেরেছিলো কিনা! ওনার কেন যেন মনে হয় ভাইটা আছে। কোথাও আছে। যদি বেঁচে থাকেই তাঁর কি স্মৃতিভ্রষ্ট হয়েছিলো? নইলে কেন তাকে আর একবার দেখে যেতে পারবেন না! বুদ্ধিজীবী হত্যার পরদিন অনেক লাশ খুঁজে খুঁজে দেখা হয়েছিলো। কোনটা যে কে তা পৃথক করে বুঝবার উপায় ছিলো না। এতটাই নৃশংস অত্যাচার করে মারা হয়েছিলো তাদেরকে! একটা লাশ দেখে আনুমানিক ভেবে নেয়া হয়েছিলো ঐটাই ওনার খোকন। আদরের ছোট ভাই। বাকিরা বিশ্বাস গেলেও উনি কখনোই বিশ্বাস করেন নাই যে খোকন মরে গেছে!

“আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো একুশে ফেব্রুয়ারী, আমি কি ভুলিতে পারি!
ছেলে হারা শত মায়ের অশ্রু রাঙ্গানো ফেব্রুয়ারী, আমি কি ভুলিতে পারি!...”

বেশ উঁচু সাউন্ডে গানের সুরে পুরনো স্মৃতির জগত থেকে বাস্তবে ফিরে আসেন তিনি। আবারো নাটক দেখতে থাকেন!

মাঝে কিছুক্ষণ খেয়াল করেন নাই। নাটকে কি কি দেখিয়েছে তাও ভালো করে খেয়াল হচ্ছেনা। হাফিজুদ্দিন সাহেবের মতন ওনারও স্মৃতিচারণে মাঝে মাঝে বিঘ্ন ঘটে। পর পর দু’বার স্ট্রোক করেছেন! কিডনি, ডায়াবেটিস, হাই প্রেশার সহ নতুন এক রোগ মাথায় স্থান দিয়েছেন। পারকিনসন্স! যত বেশি বয়স বাড়তে থাকবে মাথার বুদ্ধিকোষগুলো কিছু কিছু করে মরে যেতে থাকবে। মাঝেমাঝে যা একটু আধটু পুরনো কথা মনে করে ফেলেন!

নাটকের যতটুকু দেখেন নাই ততটুকুর কথা বাদ থাক। বাকিটুকু ভালো করে দেখা যাক! দেখতে দেখতে চমক! যা তিনি কোনদিন ভাবতেও পারেন নাই! শুধু স্বপ্ন দেখেছিলেন! গল্পের কাহিনীটা অনেকটা তাঁর আর খোকনের সাথে মিলে যাচ্ছে! উনি আরো বেশি অবাক হলেন যখন দেখলেন নাটকের ভাই চরিত্রে যাকে দেখানো হচ্ছে তাকে যেন অনেকটা খোকনেরই আদল। আরো চমক তখনো বাকি! নাটকটির শেষে নাম ওঠার সময়ে একটি মেয়ে ক্যামেরার দিকে মুখ করে হাতে স্পিকার নিয়ে বলে উঠলো, “সুধী দর্শকমন্ডলী, এটি ছিলো আমাদের একটি প্রামান্য চিত্র! মুক্তিযুদ্ধের সময় ঢাকা মেডিকেলের ছাত্রাবাস থেকে বুদ্ধিজীবী হত্যার জন্য সব ছাত্রকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো। তাদের মধ্যে চক্ষু ডাক্তার আনোয়ারুল হক খোকন অলৌকিকভাবে বেঁচে যান! কিন্তু দেশ স্বাধীন হবার পরে ফিরে এসে তিনি নিজের পৈত্রিক ভিটায় কাউকে খুঁজে পাননি। জীবন সায়াহ্নে এসে তিনি তাঁর পরিবার পরিজনদের সাথে একটিবার দেখা করার ইচ্ছা প্রকাশ-এর কারণেই আজকের এই প্রতিবেদনমূলক প্রামাণ্যচিত্র!” এতটুকু শুনেই ওনার প্রেশার বেড়ে গেলো। হাত কাঁপতে লাগলো! “সুরমা!!” বলে বড় মেয়েকে জোরে চিৎকার দিয়ে ডেকেই তিনি পড়ে গেলেন!

মেয়ে ছোট মামাকে খুঁজে পেয়ে খুশি হবেন কি মায়ের আচমকা পড়ে যাওয়া দেখে ভড়কে গেলেন! মুহুর্তের মধ্যে সারা বাড়ির সবাইকে খবর দেওয়া হলো। সবাই এসে হাজির হয়ে গেলো। কিন্তু, নাহ! আসলেই ভড়কে যাবার তেমন কিছুই হয়নি! প্রেশার বেড়ে গিয়েছিলো শুধু।

পাঠক, এর পরের ঘটনা শুধুই আনন্দের। স্বাধীনতার চল্লিশ বছর পরে বোন ফিরে পেলো তাঁর হারিয়ে যাওয়া পরিবারের সকলের কাছে মৃত বলে মনে করা ভাইটিকে। আর ভাই ফিরে পেলো তাঁর পুরো পরিবার সহ এক ঝাঁক নতুন প্রজন্মকে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
ঘাস ফুল গল্পের প্লট ভালো। যথেষ্ট আন্তরিকতা নিয়ে লিখেছেন বুঝা যাচ্ছে। গল্পের কাহিনী মূলত শামসুন নাহারকে ঘিরেই আবর্তিত হয়েছে। কিছু তুলনামূলক চিত্রও পরিলক্ষিত হল। যেমন অতীতে বাঙালীরা দেশকে কতটা ভালোবাসতেন আর এখনকার প্রজন্ম কতটা বাসেন। এই ক্ষেত্রে যথার্থভাবেই আপনি অতীতকে এগিয়ে রেখেছেন। এখনকার প্রজন্মের অনেকেই নিজের স্বার্থে বিদেশ পারি জমায় (আমিও আছি এই দলে, তবে আমার প্রেক্ষাপট ভিন্ন। অনেক কথা বলতে হবে বলে সেটা আর বলছি না)। নিজের ভাষাকে আমরা কীভাবে লাঞ্ছিত করছি, সেটাও ক্ষুদ্র অবয়বে 'এশা'র চরিত্রের মাধ্যমে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। গল্পের মূল বিষয়বস্তু যুদ্ধের সময় হারানো ভাইকে নিয়ে। অনেকের ধারণায় শামসুন নাহারের ছোট ভাই চক্ষু ডাক্তার আনোয়ারুল হোক খোকন আর বেঁচে নেই। কিন্তু শামসুন নাহার এটা বিশ্বাস করতেন না। তার ধারণা তার ভাই এখনও বেঁচে আছে এবং অবশ্যই একদিন সে ফিরে আসবে। ঘটনাচক্রে সত্যি সত্যি তার ভাই ফিরে এসেছে। চল্লিশ বছর জীবন তো আর থেমে থাকে নাই। চলমান সেই জীবনে এরই মধ্যে শামসুন নাহারের ভাই মামা হয়েছে, নানা হয়েছে। তাই ফিরে এসে এক সাথে অনেককে পেলো। বোনের সাথে হল পুনর্মিলন আর নূতনদের সাথে হল শুধু মিলন। গল্পটার কাহিনী বিন্যাস করতে যেয়ে বিষয়বস্তুর ওপর গুরুত্বটা বেশ কম হয়ে গেছে। সবার কথা তোয়াক্কা না করে শামসুন নাহার যে এখনো বিশ্বাস করেন, তার ভাই ফিরে আসবে, এটা আরও প্রকট ভাবে গল্পে তুলে ধরা দরকার ছিল। শামসুন নাহার বিখ্যাত কোন মানুষ না। তারপরও তার নামের সর্বনামগুলোতে আপনি চন্দ্রবিন্দু ব্যবহার করেছেন। বিখ্যাত মানুষ ছাড়া কারো নামের সর্বনামে চন্দ্রবিন্দু ব্যবহার করা যায় না। "মেয়ে ছোট মামাকে খুঁজে পেয়ে খুশি হবেন কি মায়ের আচমকা পড়ে যাওয়া দেখে ভড়কে গেলেন!" এই লাইনটাতে মনে হয় একটু অসংগতি আছে। এখানে মেয়েটা হল সুরমা, যাকে ডাকতে যেয়ে শামসুন নাহার পড়ে যায়। তার মানে যে প্রামাণ্যচিত্রে শামসুন নাহার তার ভাইকে দেখেছেন, সেটা শুধু তিনি একা দেখেছেন। সুরমা ওই সময় যদি তার মা'র পাশেই থাকতো তবে তাকে আর ডাকার দরকার পড়তো না। অথচ লাইনটার বক্তব্যে বুঝা যাচ্ছে সুরমা নিজেও জানতো তার ছোট মামাকে খুঁজে পাওয়া গেছে। তাই তো আপনি বলেছেন, "মেয়ে ছোট মামাকে খুঁজে পেয়ে খুশি হবেন..........." আপনি অন্তত দুই জায়গায় "তার চেয়ে" এর জায়গায় "তাঁর চেয়ে" লিখেছেন। এখানে তার ওপর কোন চন্দ্রবিন্দু হবে না। পুরনো দিনের গানের ব্যাপারে আপনি একটা মন্তব্য করে বলেছেন, "এক একটি জীবন!" এটাকে আমি ভুল বলছি না। তবে জীবনের জায়গায় ইতিহাস বললে আরও বেশী অর্থবহ হত। তখন লাইনটি হত, "এক একটি ইতিহাস!" কারণ হল এই সব গানের পিছনে অনেক ইতিহাস জড়িয়ে আছে। গল্পটার শেষ পর্যায়ে এসে আপনি কিছুটা তাড়াহুড়ো করে ফেলেছেন। ইচ্ছা করলে আপনি আরও আবেগ দিতে পারতেন লেখাটার মধ্যে। শামসুন নাহারের বিশ্বাসের ওপর আবেগটা অনেক কম হয়ে গেছে। ভাইয়ের জন্য আরও ভালোবাসা দেখাতে পারতেন। তারপরও বলবো আপনার অন্যান্য গল্পের চাইতে এই গল্পে আপনি ভালোই পরিপক্বতা দেখিয়েছেন। ধন্যবাদ যূথী। অনেক শুভ কামনা রইলো।
ভালো লাগেনি ২৫ জানুয়ারী, ২০১৪
প্রিয় পাঠক-আপনার চমৎকার পাঠ সমালোচনার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। এইবার আপনার মন্তব্যটিকে বিশ্লেষণ। শুরুতেই বলে নেই। একেক পাঠক মানেই একেক ব্যক্তিসত্ত্বা। তাই ভিন্ন ভিন্ন পাঠকের চিন্তার ধরনও আলাদা। তাই,গল্পটি পড়ার পর, আপনার যা মনে হয়েছে তাই আপনি বলবেন, সেটাই স্বাভাবিক। লেখকের রাগ করার কিছু নেই। লেখক আর পাঠকের ভিন্ন দৃষ্টিভংগী থাকবেই। এটাই স্বাভাবিক। ১) তার=তাঁর ...মেনে নিলাম। ২) এক একটি ‘জীবন’=এক একটি ‘ইতিহাস’; জীবনের জায়গায় ইতিহাস দিলেও গুরুত্বটা আরো বেশি পেতো এবং আমার মতো একটা ছোটখাটো লেখকের জন্য এটাও একটা ইতিহাস হতো। মনে হতো-‘আরিব্বাবা! দারুন কইছে তো!’ এই ব্যাপারে আমাকে আগে কেউ উপদেশ দেয়নি। ৩) আমার গল্পের যা কাহিনী, শামসুন্নাহারের বিশ্বাস যা নিয়ে, তার চিন্তাভাবনা যা নিয়ে আবর্তিত হয়েছে তা ঠিক আছে। গল্পটির নামকরণ হয়তো সেক্ষেত্রে আলাদা কিছু হতে পারতো। ‘একজন মানুষের বিশ্বাস এবং সেই বিশ্বাসের বাস্তবায়ন’ আরো বেশি যৌক্তিক হওয়ার প্রয়োজন ছিলো। আরো কম কথায়, আরো যৌক্তিকতা ও আবেগ ঢেলে গল্পটাকে সাজানো উচিত ছিলো। ৪) মায়ের পড়ে যাওয়ার যেই লাইনের ভুল আপনি ধরেছেন, সেটা ভুল নয়। একটা কাহিনীর চতুর্দিক থেকে বর্ননা সব সময়ে লেখকের লেখায় উঠে নাও আসতে পারে। ওটা পাঠককে বুঝে নিতে হবে। পাশাপাশি দুজন মানুষ টিভি দেখছে। দুজন মানুষের ওই নাটক বা প্রামাণ্যচিত্র নিয়ে ভাবনা ও প্রতিক্রিয়া ভিন্নরকম হতেই পারে। তাই, সুরমা’র চোখের সামনে যখন সামসুন্নাহার পরে গেছে, তখন এক সাথে সুরমাও বোধহয় মামাকে টিভিতে চিনতে পেরেছিল। নইলে কেন, সে ছোট মামার আবির্ভাব জানবে?? এত সূক্ষ্ণ বর্ণনা দিতে গেলে গল্প বড় হয়ে যায়। ---পাঠ প্রতিক্রিয়া স্বরূপ এই গল্পটির বিশাল একটা সমালোচনার মাধ্যমে অনেক কিছু বলার প্রয়াস হলো। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
ভালো লাগেনি ২৬ জানুয়ারী, ২০১৪
Ashraful Alam নির্লিপ্ত আবেগ ভরা সত্য অনুভূতি। আমার ভালো লেগেছে।
খুব তাড়াতাড়ি পড়ে ফেলেন আপনি। আপনার ইন্টারনেট স্পিড বেশ ভালো বলতেই হচ্ছে! আমার নেট স্পিড বেশি নয়। এক লেখা থেকে আরেক লেখায় যেতেও বেশ সময় লাগে। আবার কোন লেখা পড়তেও বেশ সময় লাগে। একেবারে হৃদয় ডুবিয়ে লেখার অনুভূতির গভীরে না ঢুকতে পারলে শান্তি পাই না। আজ আমার সব লেখাই পড়ে ফেলবেন মনে হচ্ছে! সেক্ষেত্রে আমি বেশ ভাগ্যবান।
আসলে আমার খুব ক্ষুধা । পড়ার ক্ষুধা । তাই লিখা পেলে দ্রুত খেয়ে ফেলি । আপনার লিখা ও এই রকম।
সূর্য আমাদের আনন্দের উপলক্ষ্যগুলো ক্রমান্বয়ে কমে আসছে। তোমার গল্পের শেষের প্রাপ্তীটা চোখের কোনটা ভিজিয়ে দিল। অনেক ভাল গল্প।
ভালো লাগেনি ২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১২
ধন্যবাদ, দাদা, আপনার কথাগুলো অনেক ভালো লাগলো.
ভালো লাগেনি ২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১২
নিলাঞ্জনা নীল আনন্দিত হউয়ার মত গল্প......
ভালো লাগেনি ২২ ফেব্রুয়ারী, ২০১২
ধন্যবাদ। ভালো থাকুন নিরন্তর, আপু।
ভালো লাগেনি ২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১২
sakil আমি বলব সব মিলিয়ে চমত্কার গল্প . শুভো কামনা রইলো
ধন্যবাদ, শাকিল ভাই। পড়ার জন্য। গল্পকবিতা’২০১১ এর লেখা নিয়ে যে সংকলনটি বের হবার কথা ছিলো, সেটা কি বইমেলায় এসেছে? মেলা তো প্রায় শেষ!!
ভালো লাগেনি ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০১২
মিলন বনিক চমৎকার গল্প পড়লাম. নামকরণও ভিন্ন মাত্রা পেয়েছে। সত্য সংলাপটুকু অসাধারণ, লেখিকার প্রতি অনেক ধন্যবাদ এবং শুভ কামনা।
ভালো লাগেনি ২০ ফেব্রুয়ারী, ২০১২
ধন্যবাদ ত্রিনয়ন। এরকম একটি গল্প লেখার খুব ইচ্ছে ছিলো। পাঠকের ভালো লেগেছে বলে আনন্দ পেলাম।
ভালো লাগেনি ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০১২
নিরব নিশাচর গল্প পড়তে গেলে একটু টেনে গল্প পরি.. মাঝে মাঝে কিছু বিষয় বাদ পরে যায়.. তবে গল্পটির বিষয়বস্তু নির্ধারণ চমত্কার লাগলো এবং গল্পকার হিসেবে আপনার উন্নতীটুকু চোখে পরার মত..
ভালো লাগেনি ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১২
টেনে পড়েন, এবং কিছু অংশ বাদ পরে যায়...এরকম করে পড়েছেন নাকি? আমরা পড়া বিষয় রিভাইজ করতে গিয়ে যেরকম হালকা এক পলক চোখ বুলিয়ে যাই সেরকম? শেষের দিকে মন্তব্যটা যতই মন ভুলানো টাইপের হলো, প্রথম দু’লাইনে যে মন ভরলো না!! আমার গল্পটা ভালো ভাবে পড়ে, সমালোচনাটা পেলে আরোও ভালো লাগতো।
ভালো লাগেনি ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১২
Lutful Bari Panna ছোট্ট পরিসরে এমন একটা কাহিনী তুলে আনার মধ্যে মুন্সিয়ানা ছিল। লেখার হাতটিও ঝরঝরে...
ভালো লাগেনি ১১ ফেব্রুয়ারী, ২০১২
সেরা সব লেখক পাঠকের ভিড়ে কিছু লিখতে গেলে স্বাভাবিকভাবেই নিজেকে নিয়ে কুণ্ঠিত থাকতে হয়। নিজের লেখা নিয়ে নিজের একটা প্রত্যাশা থাকেই। তবুও কেমন লিখলাম, তা পাঠকের কাছ থেকে জানতে ইচ্ছে করে। আপনাদের মন্তব্যগুলোতে খুব ভালো লাগছে। আপনার মন্তব্যটা যেন একটা স্পেশাল কিছু; ভিন্ন আঙ্গিকের। অসংখ্য ধন্যবাদ। শুভেচ্ছা।
ভালো লাগেনি ১১ ফেব্রুয়ারী, ২০১২
মোঃ আক্তারুজ্জামান চমত্কার উপস্থাপনা| সরল, সাবলীলতায় লেখা সুন্দর গল্প|
ভালো লাগেনি ৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১২
যে কারোই তাঁর নিজের তৈরী করা কোন কিছুর প্রতি অকৃত্তিম ভালোবাসা থাকে। কিন্তু, ঐ ভালোবাসার বস্তুটির প্রতি অন্যের প্রশংসা পেলে অনেক বেশি ভালো লাগে। ...অসংখ্য ধন্যবাদ, নবীন লেখকের গল্পে সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।
ভালো লাগেনি ৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১২
মামুন ম. আজিজ বৃদ্ধার দৃষ্টি মেলে সেই ঐতিহ্য আর আজকের ঘুনে ধরা কালচার এর মাথে একটা সাঁকো একটচা তুলনা ভালো ধরেছে। অভিনন্দন।
ভালো লাগেনি ৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১২
আমার গল্প পড়ে আপনার উপলব্ধিটা আমার খুব ভালো লাগলো, মামুন ভাই। তবে, মন্তব্যের বানান বিভ্রাটের জন্য কথাগুলোর পুরো অর্থ অনুধাবনে বোধহয় কিছুটা ব্যর্থ হয়েছি। তবুও ধন্যবাদ।
ভালো লাগেনি ৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

১৭ অক্টোবর - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৪৪ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪